Building Materials in walibazar, Dhaka.
ভূমিকাঃ ন্যানোপ্রযুক্তি (ন্যানোটেকনলজি বা সংক্ষেপে ন্যানোটেক) পদার্থকে আণবিক পর্যায়ে পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ করবার বিদ্যা।ন্যানোটেকনোলজি বা ন্যানোপ্রযুক্তিকেসংক্ষেপে ন্যানোটেক বলা হয়। ন্যানোটেকনোলজি পদার্থকে আণবিক পর্যায়ে পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণকরার বিদ্যা। [১]সাধারণত ন্যানোপ্রযুক্তি এমন সব কাঠামো নিয়ে কাজ করেযা অন্ততএকটি মাত্রায়১০০ ন্যানোমিটার থেকে ছোট।ন্যানোপ্রযুক্তি বহুমাত্রিক, এরসীমানা প্রচলিত সেমিকন্ডাকটর পদার্থবিদ্যা থেকে অত্যাধুনিক আণবিক স্বয়ং-সংশ্লেষণ প্রযুক্তি পর্যন্ত; আণবিক কাঠামোরনিয়ন্ত্রণ থেকে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ন্যানোপদার্থের উদ্ভাবন পর্যন্ত বিস্ত্রৃত। রিচার্ড ফাইনম্যানকে ন্যানোপ্রযুক্তির জনক বলা হয়। বিবরণঃ ন্যানোপ্রযুক্তির ব্যবহার চিকিৎসাবিজ্ঞান , ইলেকট্রনিক্স , শক্তি উৎপাদনসহ বহু ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। অপরদিকে পরিবেশেরউপর এর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব নিয়েও সংশয় রয়েছে।তারপরও পৃথিবীর বহু দেশে ন্যানোপ্রযুক্তিনিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে। ইতিহাসঃ আণবিক গিয়ার, নাসার কম্পিউটার সিমুলেশন। ১৯৫৯ সালের২৯ জানুয়ারিরিচার্ড ফাইনম্যান ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে অনুষ্ঠিত আমেরিকান ফিজিক্যালসোসাইটির এক সভায় There’s Plenty of Room at the Bottom শীর্ষক এক বক্তৃতা দেন। এই বক্তৃতাটিই সর্বপ্রথম ন্যানোপ্রযুক্তির ধারণাদেয়। ১৯৮৯ সনের নভেম্বরের ৯ তারিখ ন্যানোটেকনলজির জন্য একটা অন্যতম স্মরণীয় দিন হিসবেবিবেচিত হবে। এই দিনে ক্যালিফোর্নিয়ার IBM এরAlmaden Research Centerএ DonEigler এবং Erhard Schweizer ৩৫ টি Xenon অণু দিয়ে IBM এর লগোটি তৈরি করেছিলেন। সেইদিনই প্রথমঅণুকে ইচ্ছেমত সাজিয়ে পছন্দমত কিছু তৈরি করা সম্ভব হয় মানুষের পক্ষে।এইদিনইপ্রথম মানুষ প্রকৃতির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণভিত্তি অণুরকাঠামোকে ভাঙতে সক্ষম হয়েছিল। অণুর গঠনকেইচ্ছেমত তৈরি করেঅনেক কিছু করা সম্ভব। এক বিশাল সম্ভাবনার দ্বারমানুষের সামনে উন্মোচিতহল। শুধুমাত্র অণুর কাঠামোগত পার্থক্যহবার কারণেইকয়লা এত সস্তাআর হীরক এত দামী। দুটিজিনিসের মূলউপাদান হল কার্বণ। শুধু মাত্র অণুর গঠনের পার্থক্যের কারণে হীরক পৃথিবীর সবথেকে শক্ত দ্রব্য আরকয়লা কিংবা পেন্সিলের শীষ নরম। গুনাগুনঃ ১৯৯৯ সনে Cornell বিশ্ববিদ্যালয়ের Wilson Ho এবং তার ছাত্র HyojuneLee অণুকে জোড়া লাগানোর প্রক্রিয়া প্রদর্শন করেন।এতদিন পর্যন্ত অণু- পরমাণুর সংযোগ শুধু মাত্র রাসয়নিকবিক্রিয়ার মাধ্যমেই সংগঠিত হত।কিন্তু ন্যানোটেকনলজিরমাধ্যমে অণু- পরমাণুকে ভেঙে কিংবা জোড়া লাগিয়ে অনেককিছুই করা সম্ভবনার দ্বার খুলে দিল। ন্যানোপ্রযুক্তি কী? ন্যানো একটি মাপার একক। ম্যাট্রিক একক এর শুরুটা হয়েছিল ১৭৯০ সনেফ্রান্সে। ফ্রান্স জাতীয় পরিষদ এককগুলিকে সাধারণ করবার জন্য কমিটি গঠন করে এবং তারাই প্রথমডেসিমাল কিংবা দশ একক এর ম্যাট্রিক পদ্ধতির প্রস্তাবকরেন। এবংদৈর্ঘ্যের এককএক মিটার এরসূচনা করেন। তারাপৃথিবীর পরিধির ৪০,০০০,০০০ ভাগের এক ভাগকে এক মিটার বলেন। মিটার শব্দটি গ্রিক শব্দ metron থেকেএসেছে যার অর্থ হল, পরিমাপ। এছাড়ামিটার এর ১০০ ভাগের এক ভাগকে সেন্টিমিটার বলা হয়।১৭৯৩ সনে ফ্রান্সে আইন করেতা প্রচলন করা হয়। ১৯৬০সনে এই মিটার এরসংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়। উপকারিতাঃ ক্রিপটন ৮৬ এর কমলারঙের রেডিয়েশন এর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ১,৬৫০,৭৬৩.৭৩ ভাগের এক ভাগকে মিটারবলা হয়। ১৯৮৩সনে মিটার এর সংজ্ঞা পুনরায়পরিবর্তিত করা হয়, বর্তমানসংজ্ঞা অণুযায়ী, বায়ুশুন্যে আলোর গতির ২৯৯,৭৯২,৪৫৮ ভাগের এক ভাগকে মিটার বলা হয়। এই মিটার এর১,০০০,০০০,০০০ (১০০ কোটি) ভাগের এক ভাগকে ন্যানোমিটার বলা হয়।ন্যানো শব্দটি গ্রিকnanos শব্দ থেকেএসেছে যার অভিধানিকঅর্থ হলdwarft কিন্তু এটি মাপের একক হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর এই ন্যানোমিটারস্কেলে যে সমস্ত টেকনোলজি গুলিসর্ম্পকিত সেগুলিকেই বলে ন্যানোপ্রযুক্তি। মিটার এককটিআমাদের দৈনন্দিন জীবনেরসাথে জড়িত। বাড়িঘরআসবাবপত্র সবই আমরা মাপি এই মিটার এককে। দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত মিলিমটার স্কেলে যন্ত্রপাতিরসূক্ষতা মাপা হত।মিলিমিটারএর ছোট কোন কিছু নিয়ে চিন্তা ভাবনার অবকাশ ছিলনা। কিন্তু দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পরে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একনতুন যুগেরসূচনা হল। সেমিকণ্ডাকটর তার পথযাত্রা শুরুকরল। আরএরশুরুটা হল, ট্রানজিস্টর আবিষ্কার দিয়ে। তখনমাইক্রোমিটার একক দিয়ে আমাদের চিন্তভাবনা শুরু হল। বলা যায় যাত্রা শুরু হল, মাইক্রোটেকনোলজির। এরপরে টেকনোলজিএগুতে লাগলোপ্রচন্ড গতিতে। নানা জিনিসপত্র, যার মধ্যে টেলিভিশন, রেডিও, ফ্রিজ ইত্যাদি ইত্যাদি। আর তা কিভাবেআরো ছোটকরা যায় তা নিয়েইপ্রচন্ত যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল।কোন কম্পানিকত ছোট আকারের এইসমস্ত ভোগ্য জিনিস আমাদের কাছেপৌঁছাতে পারবে, তার প্রতিযোগিতা শুরু হল। আর এই সমস্ত ব্যাপারটা সম্ভবহল, সেমিকণ্ডাকটর সংক্রান্ত প্রযুক্তিরকল্যাণে। প্রথমদিকের রেডিও কিংবা টিভির আকারদেখলে আমাদেরএখন হাসি পাবে। এত বড়বড় জিনিস মানুষ ব্যবহার করত কিভাবে? সেই প্রশ্নটি হয়তোএসে দাড়াবে।কিন্তু এখন বাজারে দেয়ালে ঝুলাবার জন্য ক্যালেন্ডারেরমত পাতলা টিভি এসেছে। সামনে হয়তোআরো ছোটআসবে। ১৯৮০ সনে IBMএর গবেষকরা প্রথম আবিষ্কার করেন STM(Scanning Tunneling Microscope) এই যন্ত্রটি দিয়ে অণুরগঠন পর্য়ন্ত দেখা সম্ভব। এইযন্ত্রটির আবিষ্কারই ন্যানোপ্রযুক্তিকেবাস্তবে রূপদিতে সক্ষম হয়েছে। কিভাবে কাজকরে এই STM। এইযন্ত্রে খুব সূক্ষপিনের মত সুচাল টিপ আছে এবং তা যখন কোন পরিবাহী বস্তুর খুবকাছে নিয়ে যাওয়া হয়, তখনতা থেকে টানেলিং নামে খুব অল্প পরিমাণে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয়।এবং এইবিদ্যুৎ এর পরিমাণ দিয়েই সেই বস্তুটির বাহিরেরস্তরেরঅণুর চিত্রতৈরি করা হয়। তবে এই STM এর ক্ষেত্রে যা দেখতে চাইবোতাকে অবশ্যই বিদ্যুৎ পরিবাহী হতেহবে। কিন্তুবিদ্যুৎ অপরিবাহীর অণুর গঠন কিভাবে দেখা যাবে? না মানুষ বসে থাকেনি। অসম্ভবকে সম্ভবকরেই মানুষ যেভাবে এতদূর এসেছে, তেমনি ভাবে এই অসম্ভবকে সম্ভব করা গেল AFM দিয়ে। STM এরক্ষেত্রে টানেলিংবিদ্যুৎ দিয়েকাজ করা হয় এবং AFM দিয়ে সূক্ষ্মপিন দিয়েঅণুর গঠন দেখা সম্ভব। টপ টু ডাউন ও ডাউন টু টপ ন্যানোটেকনোলজির ক্ষেত্র দুটিপ্রক্রিয়া আছ।একটি হল উপর থেকে নীচে(Topto Bottom)ও অপরটি হল নীচ থেকে উপর(Bottom to top)। টপডাউন পদ্ধতিতে কোন জিনিসকেকেটে ছোট করে তাকে নির্দিষ্টআকার দেয়া হয়। এই ক্ষেত্রসাধারণত Etching প্রক্রিয়াটি সর্ম্পকিত।আর ডাউনটুটপ হল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারের ছোট জিনিসদিয়ে বড় কোন জিনিস তৈরি করা। উপসংহারঃ আমাদেরর বর্তমানইলেক্ট্রনিক্স হল, টপডাউন প্রযুক্তি। আরন্যানোটেকনোলজির হল, বটমটপ প্রযুক্তি।ন্যানোমিটার স্কেলেক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বস্তুর উপাদান দিয়ে তৈরি করা হবে এই ন্যানোপ্রযুক্তিতে। সহজে বুঝবার জন্যএকটা উদাহরণ দেয়া যাক।মনে করুন, আপনার একটাবিশেষধরনের DNA এর প্রয়োজন। সুতরাং বটমটপ প্রযুক্তিতে, সেই DNA এর ছোট ছোট উপাদানগুলিকে মিশ্রন করে সেইকাঙ্খিত DNA টি তৈরি করা হবে। তবে নানোপ্রযুক্তিতে শুধু মাত্র বটমটুটপ প্রযুক্তিই নয়, বরং টপটুবটম প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই দুটির সংমিশ্রন করা হবে। আমরা যারাকম্পিউটার ব্যবহার করছি তারাজানি যে, প্রতি বছরই কম্পিউটার এরমূল্য কমছে।প্রতিবছরই আগেরতুলনায় সস্তায় আরোভাল কার্যক্ষমতার কম্পিউটার পাওয়া যাচ্ছে। আসলে এই কম্পিউটার এর সাথেও ন্যানোটেকনোলজি সম্পর্কিতরয়েছে। কম্পিউটার এরভিতর যেপ্রসেসর আছে, আপনারা প্রায় সবাই ইন্টেল প্রসেসর এর নাম শুনে থাকবেন? এই প্রসেসর এর ভিতরে রয়েছেঅসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ন্যানোমিটার স্কেলের সার্কিট। আর তাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ন্যানোটেকনলজি। ইন্টের প্রসেসরে, সিলিকন এর উপর প্যাটার্ণকরে সার্কিটবানান হয় তার বর্তমান সাইজ হল ১০০ ন্যানোমিটার। সামনের তিন বছরে এর আকার হবে ৭০ ন্যানোমিটার। এবংসাতবছরে এর আকার হবে৫০ ন্যানোমিটার। ইন্টেল আশা করছে যে ২০১০ সনে তারা ৩০ ন্যানোমিটার সাইজে নিয়ে আনতেপারবে। আর আজকের থেকে তখনএই প্রসেসর এর আকার অর্ধেক হয়ে আসবে। সেই দিনটা খুব বেশি দূরে নয়যেদিন আপনার মোবাইলটিকাজ করবে কম্পিউটারেরমত। (বর্তমানেইএই ধরনের কিছু মোবাইল বাজারে এসেছে)। এছাড়ারয়েছে কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক। এই হার্ডডিস্কের তথ্য সংরক্ষণেরক্ষমতা দিন দিন বড়ছে। এই হার্ডডিস্কেও ব্যবহৃত হচ্ছে ন্যানোটেকনলজি। এখন বাজারে ৪ টেরাবাইটের হার্ডডিস্ক পাওয়া যাচ্ছে। অথচ এই ব্যাপারটা আজ হতে ১০ বছর আগেও ছিল কল্পনার বাহিরে। স্থির বিদ্যুৎ ও তার কারসাজি ন্যানোটেকনলজি দিয়ে সার্কিট বানানযতটা সোজাবলে মনে করা হয়, ব্যাপারটা ততটা সোজা নয়। সেইখানে প্রধান যেবাধা এসে দাড়াবে তা হল, স্থির বিদ্যুৎ। শীতের দিনেবাহির থেক এসে দরজার নবে হাত দিয়েছেন? এমনি সময়হাতে শক লাগলকিংবাঅন্ধকারে সুয়েটার খুলতে গেছেনএমনি সময় বিদ্যুৎ এর মত কণা সুয়েটারে দেখাগেল। নতুননতুন দ্রব্য এর সূচনা করছে এবংসেই সাথে ব্যবসায়িক সুযোগের দ্বার উন্মোচন করছে। by Muntaha Moon